Health & Personal Care

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ইসলামিক বিধান




স্বামীর জন্য বৈধ যে, সে তাঁর বীর্যকে তাঁর স্ত্রী হতে দূরে ফেলবে অর্থাৎ আযল করবে। এই বিষয়ে বহু হাদীস আছে,
প্রথম হাদীসঃ 
“জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কুরআন অবতীর্ণ অবস্থায় আমরা আযল করতাম) অর্থাৎ আমাদের বীর্যকে সহবাসের সময় স্ত্রীদের থেকে দূরে ফেলতাম।”
অন্য বর্ণনায় আছে, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সময় আযল করতাম, অতঃপর এই সংবাদটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর নিকট পৌঁছল তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি।[1]
দ্বিতীয় হাসীসঃ 
আবূ সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নিকট আগমন করল এবং বলল আমার এক দাসী আছে, আমি তাঁর সাথে আযল করি, আর পুরুষ যা ইচ্ছা করে আমি তা করি, আর ইয়াহুদীরা ধারণা করে যে, ছোট জীবন্ত দাফনকৃত হল আযল। নবী সাল্লাল্লাহুই আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে, ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে, আল্লাহ যদি কিছু সৃষ্টি করতে চান তাহলে তুমি তাকে তা হতে বাঁধা দিতে পারবে না।[2]
তৃতীয় হাদীসঃ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর নিকট আসল এবং বলল, আমার এক দাসী আছে যে, আমাদের সেবিকা ও আমাদের খেজুর বাগানে পানি দ এয়। আর আমি তাঁর সঙ্গে সহবাস করি এবং সে গর্ভবতী হবে এটা আমি অপছন্দ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (তুমি ইচ্ছা করলে তাঁর সঙ্গে আসল কর। কেননা তাঁর ভাগ্যে যা লেখা হয়েছে তা তাঁর গর্ভে আসবে)। লোকটি কিছুকাল অবস্থান করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসল এবং বলল, নিশ্চয় দাসীটি গর্ভধারণ করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আমি অবশ্যই তোমাকে সংবাদ দিয়েছিলাম যে, সে  অচিরেই গর্ভধারণ করবে যা তাঁর ভাগ্যে আছে।

হাদীস: 
হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমার একটি দাসী আছে। আমি তার সাথে সহবাস করি। কিন্তু তার ঔরসে সন্তান জম্ম হওয়া আমি পছন্দ করি না কারণ তার সর্বদা আমার গৃহ-কার্যে ব্যস্ত থাকতে হয়। সন্তান হলে আমার ঘর সামলাবে কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি যদি ভাল মনে কর তাহলে আযল কর। তবে তার জন্য আল্লাহ যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তা-ই হবে, এর ব্যতিক্রম সম্ভব নয়। এ কথা শুনে চলে যায়। কিছুদিন পর আবার এসে লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দাসীর তো গর্ভ হয়ে গেল! এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাই হবে।(মুসলিম)
হাদীস:
 হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে বনু যুদ্ধে যাই। যুদ্ধে শেষে আরবের অনেক লোক বন্দী রূপে আমাদের হস্তগত হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী সহবাসের প্রতি আমাদের প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এমনকি নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের পক্ষে কষ্ট হয়ে পড়ে। তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা না করেই আযল তথা জম্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ জম্ম নিয়ন্ত্রণ না করলেও তোমাদের কোন অসুবিধা নেই। কেয়ামত পর্যন্ত যত সন্তান জম্ম হওয়ার কথা তা হবেই।(বোখারী)
অর্থাৎ–তোমরা জম্ম-নিয়ন্ত্রণ কর আর না কর, আল্লাহ তাআলা যত লোক সৃষ্টি করার কথা সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন, তোমরা যত ব্যবস্থাই গ্রহণ কর৩ তা পয়দা হবেই। অর্থাৎ—তোমরা তো মান মায়ের গর্ভে এক ফোঁটা বীর্য পড়লে তাদ্বারা সন্তান জম্ম হয় আবার যদি বীর্য প্রতিরোধ করতে পার তাহলে আর আর সন্তান জম্ম হতে পারে না। কিন্তু তোমাদের এই ধারণা ভুল ও অমূলক। মনে রাখতে হবে যে, প্রতি ফোঁটা বীর্যে দ্বারাই সন্তান জম্ম নেয় না। অনেক সময় দেখা যায় যে, মায়ের উদরে বীর্য পড়া সত্ত্বেও বাচ্ছা হয় না আবার অনেক সময় সন্তান না হওয়ার হাজারো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্তেও সন্তান হয়ে যায়। অতএব বুঝা গেল যে, সন্তান হওয়া নির্ভর করে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, জম্ম নিয়ন্ত্রণের উপর নয়। তাই জম্ম নিয়ন্ত্রণ বা আযল করলেও হয়ত অসাবধানতা বশতঃ দু এক ফোঁটা বীর্য মাতৃগর্ভে প্রবেশ করবে আর তাতেই সন্তান জম্ম নিবে। উপরন্ত আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে বীর্য ছাড়াই সন্তান পয়দা করতে পারেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। (মুসলিম)

হাদীস :
 সাঈদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন—এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)—এর নিকট এসে বললঃ আমি আমার স্ত্রীর সাথে আযল করতে চাই। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তা কেন কর? লোকটি বলল, আমার স্ত্রীর কোলের বাচ্ছা এখনও দুধপান করে। এখন যদি তার গর্ভ হয় তাহলে দুধ কমে যাবে এবং বাচ্ছার অসুবিধা হবে। এই জন্য আমি আযল করি।  উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এতে যদি দুগ্ধপোষ্য বাচ্ছার ক্ষতি হতো তাহলে পারস্য আর রুমবাসদেরও ক্ষতি হতো। (মুসলিম)
কারণ পারস্য ও রুমবাসীরা শিশুর দুধপান কালে স্ত্রী-সহবাসে অভ্যস্ত।
কাজেই তাদের যখন কোন ক্ষতি হয় না তাই স্ত্রী গর্ভবর্তী হয়ে যাওয়ার আশাংকায় আযল করা অমূলক ও অনর্থক কাজ। আজও অনেক লোক এই আশংকায় স্ত্রী-সহবাস করে না। অথচ এই সময়ে মহিলাদের মিলন—কামনা প্রবল হয়ে থাকে। কিন্তু লজ্জায় তারা তা প্রকাশ করে না। অতএব তাদের এই কামনা ও আগ্রহকে উপেক্ষা করা উচিৎ নয়।
হাদীস :
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আযল (জম্ম-নিয়ন্ত্রণ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ প্রতি ফোঁটা বীর্যে থেকেই সন্তান জম্ম হয় না। আল্লাহ তাআলা কোন কিছু সৃষ্টি করতে গেলে কেউ তা ঠেকাতে পারে না। (মুসলিম)
হাদীস :
হযরত জুদামা বিনতে ওহাব বলেন। আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)—এর খেদমতে উপস্থিত হই। তখন তিনি সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন যে, আমি শিশুর দুধপান অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করতে নিষেধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম যে, পারস্য ও রূমবাসীগণ এমতাবস্থায় স্ত্রী সহবাসে অভ্যস্ত আর এতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। অতঃপর সাহাবাগণ আযল (জম্ম-নিয়ন্ত্রণ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে২ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এটাও জীবিত কবর দেয়ার শামিল এই স্বভাব (আরবী) এর অন্তর্ভুক্ত। (মুসলিম)
“যে শিশুকে জীবিত কবর দেয়া হয়েছে; কেয়ামতের দিন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জম্ম-নিয়ন্ত্রণ কারীগণ মূলতঃ সেই প্রথাকেই বাস্তবায়ন করছে যা জাহেলী যুগে আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। উপরন্ত জাহেলী যুগে জিন্দা কবর দেয়ার যে প্রথাকে ও হাদীস কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছে আমরা তার থেকে আরো এগিয়ে গিয়েছি। কারণ তারা তো কেবল মেয়ে সন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দিত, ছেলেদেরকে নয়। আর জম্ম নিয়ন্ত্রণ দ্বারা ছেলে-মেয়ে উভয়েরই আগমন পথ রোধ করা হয়, শরীয়তের আইনে যা হারাম। এই হিসেবে জম্ম নিয়ন্ত্রণের প্রবক্তা, কর্মচারী, ঔষধ প্রদানকারী, হাকীম, ডাক্তার, ঔষধ প্রস্তুতকারী, এর পক্ষে গ্রন্থ রচনাকারী সকলেই গুনাহগার হবে।

No comments

Powered by Blogger.